শরীরে দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি করতে যে ফলগুলো খাবেন তার সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক, আজ আমি আপনাদের মাঝে আলোচনা করব শরীরে দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি করতে যে ফলগুলো বেশি পরিমাণে খাবেন। আমাদের অনেকেরই অনেক সময় রক্তের প্রয়োজন হয় এবং চিন্তায় পড়ে যায় কোন কোন ফল গুলো রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে। শরীরের রক্ত না থাকলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই আপনাদের মাঝে শরীরে দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি করতে যে ফলগুলো খাবেন তার সম্পর্কে জানাবো।


রক্ত ছাড়া মানুষ এক মুহূর্ত বাঁচতে পারে না। বিশেষ করে একজন গর্ভবতী মায়েদের রক্তের প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী অবস্থায় তারা অনেকেই জানতে চাই শরীরে দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি করতে কোন ফল গুলো বেশি উপকারী। চলুন দেরি না করে শুরু করি শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করতে যে ফলগুলো খাবেন তার সম্পর্কে।

ভূমিকা

মানবজীবনে রক্তের খুব প্রয়োজন। বিভিন্ন ফল খেয়ে আমরা আমাদের শরীরের রক্তের চাহিদা পূরণ করতে পারি। কয়েকটি ফল খেলে রক্ত তৈরি হয়ে যায়। রক্তবৃদ্ধি করতে কমলালেবু স্ট্রবেরি আঙ্গুর ডালিম আপেল জাম বিট ইত্যাদি ফলগুলো বেশি পরিমাণে রক্ত বৃদ্ধি করে। এ ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আইরন ক্যালসিয়াম ও ফাইবার থাকে যার রক্তের হিমোগ্লোবিন দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে। আপনারা চাইলেও রক্ত বৃদ্ধি করতে প্রতিনিয়ত এর ফল গুলো খেতে পারেন।

শরীরে দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি করতে যে ফলগুলো খাবেন

যদি আপনার গায়ের রং হাত-পা চোখ ফ্যাকাসে হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে রক্তের সমস্যা হয়েছে। অ্যানিমিয়া রোগ হচ্ছে রক্ত সংকৃত রোগ। এ রোগ ঠেকাতে প্রতি মাসে মাসে রক্ত নেওয়া লাগে । বিভিন্ন কারণে রক্তের অভাব হতে পারে যেমন ফলিক এসিডের অভাব আয়রনের ঘাটতি রক্তের ক্ষয় ইত্যাদি। শরীরের দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি করতে কয়েকটি ফল খেতে পারেন যেমনঃ

ডালিমঃ ডালিম এমন একটি ফল যা খেলে দ্রুত রক্তের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ডালিমে রয়েছে আইরন ভিটামিন এ সি এবং ই সমৃদ্ধ। প্রতিনিয়ত এ ফল খেলে আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ডালিম হাত দিয়ে ছাড়িয়ে খেতে পারেন অথবা জুস করে খেলেও ভালো উপকার পাবেন। নিত্য দিনের খাদ্য তালিকায় দ্রুত রক্ত করতে চাইলে অবশ্যই একটা করে ডালিম খেতে পারেন।

কলাঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আইরন। কলা খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন দুইটি করে পাকা কলা খেলে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হয়।

আপেলঃ রক্ত তৈরি করতে আপেল কিন্তু অত্যন্ত উপকারী। হিমোগ্লোবিনের গুণ বাড়াতে প্রতিনিয়ত আপেল খেতে পারেন। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিন রক্ত বাড়াতে চাইলে দ্রুত আপেলের খোসা সহ খেতে হবে।

কমলালেবুঃ কমলালেবুতে ভিটামিন সি এবং আয়রন উপস্থিত থাকে। রোজ সকালেএকটি করে কমলা লেবু খাওয়া উচিত। এতে রক্ত বৃদ্ধি পাবে।

বিটঃ বিট কোন ফল নয় তবে বিট খেলে যাদের রক্ত কম আছে তাদের দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি করবে। বিটের রং লাল। আপনি চাইলে বিটের জুস বানিয়ে খেতে পারেন।

অন্যান্য ফল যা খেলে রক্ত বাড়ে

কিসমিস, শুকনো খেজু্‌র, আঙ্গুর, তরমুজ, কালো জাম ইত্যাদি। প্রতিনিয়ত এর ফল গুলো খেলে রক্তের মান উন্নত করে এবং রক্ত বাড়াতেও সাহায্য করে। কিসমিস, কালোজাম, খেজুর, তরমুজ এসব গুলো ফল রক্তের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন যদি আপনি এ ফলগুলো দুই থেকে তিনটি খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে শরীরে রক্ত বৃদ্ধি পাবে। কমলালেবু লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কমলা খায় তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অনেক সময় ভিটামিন সি এর অভাব হলে রক্তশূন্যতা পায় সে ক্ষেত্রে ভিটামিন সি যুক্ত ফলগুলো বেশি পরিমাণ খেলে রক্ত বৃদ্ধি হতে পারে।

রক্ত বৃদ্ধি করতে সবুজ শাকসবজি

সবুজ শাকসবজি রক্ত বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে কচুর স্বাদ কচুর লতি পালং শাক লেটুস ব্রেটলি পুদিনা পাতা ইত্যাদি নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি অত্যন্ত উপকারী। চলুন জেনে নেই রক্তবৃদ্ধি করতে সবুজ শাকসবজি গুলো কি কিঃ

পালং শাকঃ পালং শাক প্রচুর পরিমাণে আইরন থাকে যা রক্তবৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের সমস্যা দূর করতে পালং শাক অত্যন্ত উপকারী। প্রতিনিয়ত পালং শাক খেলে রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

কচুর শাকঃ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে কচুর শাক অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও আগে রয়েছে আইরন ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন কচুর শাক খেলে দৃষ্টিশক্তি এবং রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

কচুর লতিঃ আমাদের অনেকেরই কচুর লতি অত্যন্ত পছন্দের একটি খাবার। কচুর লতিতে ফাইবার এবং আর বেশি থাকে। নিয়মিত কচুর লতি খেলে প্রচুর পরিমাণে রক্ত তৈরি হয়।

পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতা রক্তিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে এবং রক্ত উৎপাদন করতে সাহায্য করে।

ধনিয়া পাতাঃ কিডনি সুস্থ রাখতে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে ধনিয়া পাতা অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও ধনিয়া পাতা নিয়মিত খেলে রক্ত হিমোগ্লোবিনের মান উন্নত করে এবং রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে।

লেটুস পাতাঃ লেটুসপাতা কাঁচা অথবা রান্না করে খাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত লেটুসপাতা খেলে নতুন রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে।

রক্ত বৃদ্ধি করতে কোন মাছ বেশি উপকারী

রক্ত বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও মাছ অত্যন্ত উপকারী তবে জানতে হবে কোন মাছগুলো রক্ত উৎপাদন সহায়তায় বেশি উপকারী। চলুন আজ আমরা জানব রক্তবৃদ্ধি করতে কোন মাছ বেশি উপকারী। সামুদ্রিক মাছ এবং ছোট মাছ এ প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা রক্তবৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও টেংরা, জিওল, শিং মাছ খেলেও রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পাই। তাই রক্তবৃদ্ধি করতে এ ধরনের মাছগুলো বেশি পরিমাণে খেতে পারেন।

রক্তস্বল্পতা দূর করতে যে খাবারগুলো বেশি পরিমাণে খাবেন

প্রতিদিন আমাদের আয়রন যুক্ত ফল সবুজ শাকসবজি মাছ মাংস খেতে হবে। কারণ রক্তবৃদ্ধি করতে এ ধরনের খাবার দ্রুত কাজ করে। প্রতিদিন আয়রন গ্রহণ করতে বিভিন্ন ফলমূল এক থেকে দুইটি খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। স্বাভাবিকের তুলনায় শরীরের রক্ত কম থাকলে তাকে রক্তস্বল্পতা বলে। শরীরের রক্তশূন্যতা হলে খাবারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেলেও রক্তস্বল্পতা দূর করা যায়। রক্তস্বল্পতা দূর করতে যে খাবারগুলো বেশি পরিমাণে খাবেন সেগুলো হচ্ছেঃ

কলিজাঃ কলিজায় আইরন ভিটামিন বি উপাদান থাকে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের কলিজা থেকে দূরে থাকতে হবে। এছাড়াও রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য প্রতিনিয়ত খাবারের তালিকায় কলিজা থাকলে বেশ উপকৃত হবেন।

দুধঃ দুধে রয়েছে পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম প্রোটিন ও ভিটামিন যা শরীরের শক্তি জগতে সাহায্য করে। প্রতিনিয়ত দুধ খেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে রক্তস্বল্পতা থেকে মুক্ত রাখে।

টমেটোঃ রক্তস্বল্পতার হাত থেকে রক্ষা করতে টমেটো অত্যন্ত কার্যকারী উপাদান। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখার চেষ্টা করতে পারেন।

ডালঃ পছন্দের তালিকায় অনেকেরই ডাল থাকে। তবে ডাল খেলে যে রক্তশূন্যতা দূর হয় তা অনেকেই জানেনা। বিশেষ করে মাসকলাইয়ের ডাল মসুর ডাল অথবা মুগ ডাল এ ডালগুলোর মধ্যে ফোলেট পাওয়া যায়। ফলেট রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে। রক্তস্বল্পতা দূর করতে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি ডাল রাখতে পা্রেন।
আরো পড়ুনঃ
ডিমঃ প্রতিদিনের তালিকা সকালে ডিম খেলে রক্তস্বল্পতা ঠেকাতে কাজ করে। ডিমের কুসুমের মধ্যে আইরন থাকে জ্বালো হয়তো রক্ত কণিকার মাত্রা বাড়ায়।

মধুঃ মধুর মধ্যে রয়েছে কপার ম্যাঙ্গানিজ ও আয়র ন মধু খেলে শরীরের হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করে। লেবুর শরবতের সাথে প্রতিনিয় ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।

খেজুর ও চিনা বাদামঃ পুষ্টিগুণ ও আয়রনের ভরপুর খেজুর। প্রতিনিয়ত সকালে রক্তস্বল্পতা দূর করতে চার থেকে পাঁচটি খেজুর ভালোভাবে ধুয়ে খেলে রক্তস্বল্পতা ঠেকাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, চিনা বাদাম অধিক পরিমাণে আয়রন থাকে। রোজ সকালে চিনা বাদাম খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।

লেখক এর মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আপনাদের মাঝে শরীরের দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি করতে যে ফলমূল এবং খাবার খাবেন তার সম্পর্কে ভালোভাবে জানিয়েছি। ফলমূল এবং খাবার খেলে খুব সহজেই রক্তস্বল্পতা দূর হয়। আপনাদের মাঝে কয়েকটি রক্ত বৃদ্ধির ফল এবং কয়েকটি সবজির কথা উল্লেখ করেছি। আশা করি, এ খাবারগুলো প্রতিনিয়ত খেলে দ্রুত শরীরে রক্ত বৃদ্ধি হবে। প্রতিনিয়ত দুই থেকে তিনটি ফল খেলে আয়রনের অভাব দূর হয়। শরীরে আয়রনের জন্যই হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পাই। যদি আমার আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে গিয়ে নিজের মতামত জানাতে পারেন। আমার আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url