গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আজ আমি আপনাদের মাঝে আলোচনা করব গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার
খাওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় অনেকে জানতে চান গর্ভাবস্থায় কি ধরনের খাবার খেলে
বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পাবে এবং কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। শিশুদের বিকাশিত
এবং সঠিক ওজনের জন্য গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে হবে। যারা মা হতে
চলেছেন তাদের জন্য প্রথমে জানতে হবে কি কি খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া গর্ভাবস্থায় খুবই জরুরী। সুষম খাবার বাচ্চার গড়ে ওঠা বিকাশিত হওয়া সঠিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে। গর্ব অবস্থায় সুষম খাদ্য খাওয়া সবচাইতে জরুরী। গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
ভূমিকা
গর্ভাবস্থায় শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য খাবার প্রয়োজন। বাচ্চা
সম্পন্ন বেড়ে উঠার জন্য শর্করা জাতীয় খাবার রঙিন শাক সবজি ফলমূল ডিম দুধ জাতীয়
খাবার মাছ মাংস ভাত রুটি খেতে হবে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম ফলিক এসিড আয়রন সমৃদ্ধ
খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবারের প্রয়োজন
হয় না তেমন। তবে পরের মাসগুলোতে সুষম খাদ্য খেতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের কি
ধরনের খাবার খাওয়া তালিকার মধ্যে থাকতে হবে।
গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে এবং বাচ্চার বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি
স্বাস্থ্যজীলতা প্রতিরোধ করতে সুষম খাদ্য খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে
পানি প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। একটি পুষ্টিকর খাবার তালিকায় বাচ্চার মানব
দেহের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম আয়রন আয়োডিন
ভিটামিন এ ভিটামিন সি ভিটামিন ডি ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করতে হবে। গর্ভবস্থায়
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আরো অন্যান্য খাবার খেতে হবে।
গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন
গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চা সুস্থ থাকার জন্য এবং সঠিক ওজনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে
প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে ডাল মাছ মাংস ডিম দুধ ফলমূল
শাক-সবজি ফলিক এসি ড আয়রন। গর্ভে শিশুর উপযুক্ত পুষ্টি চাহিদা মেটাতে
গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাদ্য খাবার খাওয়া প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
এবং স্বাস্থ্য জটিলতার সমস্যা মেটাতে সুষম খাদ্য তালিকা মেনে খাবার
খাওয়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। সকালে একটি করে ডিম এবং
রাতের বেলায় এক গ্লাস দুধ খাওয়া প্রয়োজন।
আরো পড়ুনঃ টক জাতীয় ফলের গুনাগুন সম্পর্কে জানুন
পুষ্টিকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রতিদিনের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আয়োডিনযুক্ত খাবার ও সামুদ্রিক মাছ গর্ভবতী মায়েদের খাবারের তালিকায় থাকা খুবই
জরুরী। বাচ্চার চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করতে সামুদ্রিক মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। চিকিৎসকরা জানান গর্ভাবস্থায় এক গ্লাস দুধ আখরোট বাদাম কাঠবাদাম
ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। একটা গর্ভবতী মাকে খাবারের প্রতি চাহিদা আনতে
হবে। বিশেষ করে ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে বাচ্চার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে তাই এ
সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য খেতে হবে।
গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা
মা হচ্ছে গাছের ছায়ার মত। গর্ভবতী অবস্থায় একটা মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে
খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। শিশুর মানসিক বিকাশের উন্নতি ঘটাতে প্রোটিন সমৃদ্ধ
ক্যালসিয়াম আয়রন খাবার নিশ্চিত করতে হবে। সন্তান পেটে আসার পর থেকেই একটি মাকে
ভিটামিন যুক্ত খাবার গুলো বেছে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কি কি খেলে বাচ্চার
মানসিক বিকাশের উন্নতি ঘটবে এবং কি খাওয়া জরুরী। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসের
বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে মাথা ঘোরা বমি হওয়া খাবার অরুচি রক্তশূন্যতা ওজন
কমা আর ইত্যাদি।
চার মাসের শেষের দিক থেকেই খাবারের চাহিদাগুলো মেটাতে হবে। একটি মায়ের জন্য সব
রকমের খাদ্যর প্রয়োজন রয়েছে। চিকিৎসকরা জানান গর্ভবতী মায়েদের প্রতি দিন ১০
থেকে ১২ গ্লাস পানি খেতে হবে। ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করবে আয়োডিন।
গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি হতে থাকে পাঁচ মাস থেকেই বাচ্চার ওজন
প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে বৃদ্ধি হয়। অনেকেই বাড়তি খাবার না খাওয়ার কারণে
বাচ্চারা অপুষ্টিতে ভোগে এবং বাঁচার ওজন কম থাকায় বাচ্চা রোগা হয়। এজন্য এ সময়ে
ভাত খাবার পাশাপাশি অন্যান্য বাড়তি খাবার খেতে হবে।
গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মায়েদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের
খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। তবে সকাল থেকে রাত তিন বেলা খাবার খাওয়ার পাশাপাশি
বাড়তি খাবার খেতে হবে। সকাল ৭ থেকে ৮ এই সময়ের মধ্যে রুটি, পরোটা, ডিম, চা
ইত্যাদি খেতে পারেন। ১০ থেকে ১১টা এই সময়ে দুধ, বাদাম, কিসমিস, বিস্কুট, শুকনা
জাতীয় খাবার খেতে পারেন। দুপুরবেলায় ১ থেকে ২ এই সময়ের মধ্যে ভাত, মাছ, মাংস,
সামুদ্রিকমাছ, শাকসবজি অথবা ডাল খেতে পারেন।
৪ অথবা ৫ বিকেল বেলায় এই সময়ে ফলমূল, নুডুলস, শসা, গাজর, টমেটো, চা অথবা কফি
খেতে পারেন। রাতের বেলায় ৮ থেকে ৯ এ সময়ের মধ্যে ভাত, মাছ, ডাল, সামুদ্রিক মাছ
খেতে পারেন। এবং রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধের মধ্যে জাফরান অথবা মাদার
হরলিক্স খেতে হবে। সকাল থেকে রাত এই খাবারগুলো সিরিয়াল অনুযায়ী খেলে আপনার
বাচ্চার ওজন ভালো হবে। এবং বাচ্চার ব্রেন ও মস্তিষ্ক পূর্ণাঙ্গভাবে গঠন হবে।
গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় যে ফলগুলো খাবেন
কলাঃ গর্ভাবস্থায় কলা খেলে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি হয়। কলায় রয়েছে আইরন
হিমোগ্লোবিন যা রক্তশূন্যতার মাত্রা কমায়। কলা কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ ফল যা খেলে
শক্তির চাহিদা পূরণ করে।
আপেলঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য আপেল খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপেল খেলে পটাশিয়াম
বৃদ্ধি করে।
কমলাঃ কমলা গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয় ফল যা খেলে ভিটামিন সি এর চাহিদা
পূরণ হয়। কমলা বাচ্চার ধোনের মস্তিষ্ক এবং বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
তরমুজঃ তরমুজ খেলে গরম এবং শরীরে ঠান্ডা রাখে। তরমুজ পানি জাতীয় ও ফল। তরমুজ
খেলে পানির অভাব পূরণ হয়, তবে অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।
বেদানাঃ গর্ভবতী মায়েদের রক্তশূন্যতা হলে প্রতিনিয়ত একটি করে বেদানা খেলে
রক্তের অভাব পূরণ হয়। রক্ত তৈরিতে বেদানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গর্ভবস্থায় ফল যেমন উপকারী তেমন ফলের অপকারিতা রয়েছে তবে কিছু কিছু ফল খেলে
গর্ভবতী মায়েদের ক্ষতি হতে পারে সেগুলো হচ্ছেঃ
পেঁপেঃ কাঁচা অবস্থা অথবা পাকা পেঁপে খেলেই গর্ভপাত হওয়ার সৃষ্টি করে।
গর্ভাবস্থায় পেঁপে না খাওয়াই ভালো। পেপে খেলে পাকস্থলীতে ব্যথা হতে পারে এবং
সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি করে।
আনারসঃ টক মিষ্টি আনারস প্রায় সবাই খেতে পছন্দ করে তবে গর্ভবতী মায়েদের আনারস
খেলেই ক্ষতি হবে। আনারসে থাকে ব্রোমেলাইন নামক উপাদান যা জরায়ু সৃষ্টি করতে পারে
এবং গর্ভবতী মায়েদের ডায়রিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আঙ্গুরঃ আঙ্গুর খেলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। বাচ্চা হওয়ার শেষ দিকে
আঙ্গুর খাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ।
লেখকের মন্তব্য
গর্ভবতী মায়েদের খাবার মেনে খেতে হবে। এবং বিভিন্ন ফল আছে যেগুলো খেলে ক্ষতি
হতেই হবে সে ফলগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিনিয়ত সুস্থ থাকার জন্য ফলমূল
শাক-সবজি মাছ মাংস ইত্যাদি খেতে হবে। বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির জন্য তিন বেলার
পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েদেরকে বাড়তি খাবার খেতে হবে। প্রতিনিয়ত দুটি করে
ডিম ও দুই থেকে এক গ্লাস দুধ খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। এবং বিশেষ যত্ন সহকারে
গর্ভবতী মায়েদেরকে থাকতে হবে।
প্রিয় পাঠক, আশা করছি আজকের লেখা আর্টিকেলটি ভালো লাগবে। যদি ভালো লাগে তাহলে
আপনার আত্মীয় স্বজনের কাছে শেয়ার করতে পারেন। এবং কমেন্ট বক্সে নিজের মতামত
জানে যেতে পারেন। আরো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তামান্না আইটির পাশে
থাকুন। আমার আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। পৃথিবীই হোক সুন্দরময়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url