বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে অভাবজনিত রোগের লক্ষণ জেনে নিন

বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে অভাবজনিত রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। সেটা মারাত্মক ক্ষতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বিভিন্ন ভিটামিন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সঠিক সময়ে সঠিক ভিটামিন শরীরের না থাকলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। চলুন জেনে নেই বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে অভাবজনিত রোগের লক্ষণ গুলো কি।


শরীর সুস্থ থাকবে যদি ভিটামিন শরীরে ঠিকমতো থাকে। আপনারা হয়তো অনেকেই বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে অভাব জনিত রোগের লক্ষণ পেয়েছেন। ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৯ আরো অনেক ভিটামিন শরীরের জন্য উপকারী। আজ আমি আপনাদের জানাবো বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে কোন কোন রোগ গুলো হয়ে থাকে। একজন স্বাভাবিক মানুষের ভিটামিনের প্রয়োজন থাকে।

ভূমিকা

ভিটামিনের অভাবে শরীরের শারীরিক লক্ষণ ও কার্যকর ক্ষমতা নষ্ট হয়। ভিটামিনের অভাবে চুল পড়া, স্নায়ুত ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং আরো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। শারীরিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দুধ ও দুগ্ধ জাত খেতে হবে। ভিটামিন ডি উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। তার প্রতিদিন সকালবেলা ভিটামিন ডি অর্থাৎ সূর্যের আলো সকাল রোদে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়।
শুধু রাতকানা রোগী নয় ভিটামিনের অভাবে আরো বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ভিটামিন বি১২ ভিটামিন বি৯ এবং ভিটামিন সি অভাবে মানবদেহে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্র কমাতে পারে। ভিটামিন অথবা খনিজ পদার্থ শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম থাকলে ভিটামিনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার জন্য দায়ী থাকে। নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিন রয়েছে যা শরীরের ভেতরের মাত্রা কমে গেলে রক্তস্বল্পতার সৃষ্টি করে।

বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে অভাবজনিত রোগের লক্ষণ

সকল পুষ্টিরি একটি বিশেষ ইঙ্গিত রয়েছে। এবং সেটা হতে পারে শারীরিক অথবা মানসিক। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে কিছু ভিটামিনের অভাবে শারীরিক লক্ষণের সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হলো।
শুষ্ক ঠোটঃ শুকিয়ে গেলে কিংবা ফেটে গেলে ভিটামিন বি টুয়েলভ এর অভাব দেখা দিয়ে থাকে। হাঁস মুরগির মাংস খেলে ভিটামিন বি টুয়েলভ এর অভাব কমাতে পারে। বেশিরভাগ শীতকালে শুষ্ক ঠোট ফাটা দেখা দিতে পারে।

অকালে চুল পাকাঃ অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার কারণ হচ্ছে শরীরের কপারের অভাব। তাই মাশরুম, কাজুবাদাম,তিলের বীজ, কপারযুক্ত খাবার খেলে অকালে চুল পাকা বন্ধ হয়ে যাবে।

খুশকিঃ ফ্যাটি এসিডের অভাবে চুলের খুশকি হয়ে থাকে। খুশকি দূর করার জন্য প্রতিনিয়ত ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত তিসির দানা ও চিয়া সিড ইত্যাদি খেলে খুশকি দূর হয়।
মলিন ত্বকঃ ভিটামিন ই এর অভাবে ত্বক ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। তাই মাংস, কাঠবাদাম, পালং শাক। উদ্ভিজ্জ তেল ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে মলিন ত্বক সুন্দর করতে পারেন। ভিটামিন ই এর অভাবে এই সমস্যাটি হয়।

ক্ষতস্থান ও কাটাছেঁড়াঃ শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে জানতে হবে শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব রয়েছে। এর জন্য ভিটামিন সি ত্বক জাতীয় ফলগুলো বেশি পরিমাণে খেতে হবে। যেমন মাল্টা, কমলা, লেবু, আমলকি ইত্যাদি।

শারীরিক সমস্যাঃ বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফার্মেসিতে গিয়ে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট কিনে খেতে হবে। তাহলে খুব সহজেই শারীরিক সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।


ভিটামিনের অভাবে অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার লক্ষণগুলো কি কি

ভিটামিনের অভাবে অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার লক্ষণগুলো হচ্ছে লোহা স্বল্পতাজনিত অভিজামিনের অভাবজনিত রোগের মত। চলুন জেনে নিই ভিটামিনের অভাবে অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার লক্ষণগুলো কি কি।

  • অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট
  • ওজন বৃদ্ধি ওজন কমা
  • দুর্বলতা
  • ফ্যাকাশে হলুদ ত্বক
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি
  • শ্বাসকষ্টের জন্য শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া 
  • অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
  • রাতকানা রোগ
  • শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন
ভিটামিনর অভাবে অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার লক্ষণগুলো মারাত্মক ক্ষতিকর। ধীরে ধীরে রক্তস্বল্পতাসহ ভিটামিনের অভাবজনিত রোগের জটিল দিকের বিকাশ লাভ করে। তাই উপর স্বর্গগুলো প্রথমে জানার পরপর এই ভিটামিন জাতীয় খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। ভিটামিন জাতীয় খাদ্য না খেলে আস্তে আস্তে শরীরের আক্রমনাত্মক হতে পারে।

ভিটামিনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার কারণ

ভিটামিনের অভাবজনিত রোগের রক্তস্বল্পতান জন্য শরীরের ভিটামিন এবং মিনারেল এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। এর মধ্যে কয়েকটি রক্তস্বল্পতার কারণগুলো চলুন জেনে নেইঃ

  • দীর্ঘস্থায়ী লিভারের সমস্যা
  • ক্ষুদ্র অঙ্গের রোগ অথবা আঘাত
  • ভিটামিন সি এর অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা
  • সেলিয়াক রোগ
  • প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন প্রক্রিয়া করতে শরীরের অক্ষমতা
  • ডাক্তারের ঔষধের প্রতিক্রিয়া
  • খিচুড়ি প্রতিরোধে ঔষধ
  • ভারসাম্যহীন খাদ্য ও ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পাওয়া

ভিটামিনের অভাবে অভাবজনিত রোগের চিকিৎসা

ভিটামিন বি৯ এর অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রক্তস্বল্পতার জন্য সম্পূরক খাবার খাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ভিটামিন বি১২ পর্যবেক্ষণ করে শরীরের মধ্যে ইনজেকশন দেওয়া হয়। ভিটামিন বি১২ এর অভাব দেখা দিলে প্রাথমিকভাবে ইনজেকশন মাসে একবার করে দেওয়া হয়। গুরুতর ভিটামিনের অভাবে অসুস্থ না হলে স্প্রে অথবা ভিটামিন বি১২ বড়ি দেওয়া হয়। ভিটামিন সি এর অভাবে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী জানান টক জাতীয় ফল খেলে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়। ভিতামিন সি এর অভাবে রক্তস্বল্পতার জন্য ভিটামিন সি এবং ট্যাবলেট চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ

বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রায় সকলেরই ভিটামিনের অভাবে রোগ বেশি দেখা দেয়। ভিটামিনের অভাবে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের বিঘ্ন ঘটে। ভিটামিনএ এর অভাবে রাতকানা রক্তস্বল্পতা ক্যান্সারের ঝুঁকি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে।

রাতকানাঃ বেশিরভাগ সময়ে ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। রাতকানা রোগ এমন একটি রোগ যা দিনের বেলা দেখতে পারে ও চলাফেরা করতে পারে কিন্তু রাতের বেলা স্বাভাবিকভাবে দেখতেও চলাফেরা করতে পারেনা। রাতকানা রোগটা বাচ্চা থেকে শুরু করে সকলেরই হয়ে থাকে।
রক্তস্বল্পতাঃ ভিটামিন এ শরীরে কম থাকলে রক্তস্বল্পতার দেখা দিতে পারে। এবং দীর্ঘস্থায়ী লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে ভিটামিন এ কম থাকলে আয়রন ব্যাহত হয় তাই অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা। বেশি থাকে।

ক্যান্সারের ঝুঁকিঃ ভিটামিন এ এর অভাবে গবেষণা জানা গিয়েছে ২১% মানুষের শরীরে টিউমার বা স্কিন ক্যান্সার ভিটামিন এ অভাবে হয়ে থাকে।

ভিটামিন এ খাবারগুলো পাবেন সবুজ শাক-সবজি হলুদ ও রঙ্গিন ফলমূল ইত্যাদির মধ্যে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। শাকসবজি এবং ফলমূল গুলো হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া, পাকা পেঁপে, মাখন, ব্রেকলি, কমলালেবু, বাদাম, চিজ ইত্যাদি। তাছাড়াও মাছের তেল, তেলযুক্ত মাছ, ডিম, কলিজা, মাংস ইত্যাদি খাবার থেকেও ভিটামিন এ পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত এই খাবারগুলো খেলে ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ হয়।

লেখক এর মন্তব্য

আমি যদি প্রতিনিয়ত ভিটামিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করেন তাহলে ভিটামিনের অভাবে অভাবজনিত রোগের লক্ষণগুলো দেখা দিবে না। তাই প্রতিদিন ভিটামিনযুক্ত খাদ্য খাওয়ার চেষ্টা করবেন। ভিটামিন যুক্ত খাদ্য না খেলে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। ভিটামিন এর অভাবে রাতকানা রোগ হয় আয়োডিনের অভাবে গলগন্ড রোগ হয় ভিটামিন সি এর অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

আশা করছি আজকের লেখা আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে। আমার আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যদি আমার আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমার পেজটিকে ভিজিট করতে পারেন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামতটি জানাতে পারেন। নিজে ভালো থাকুন এবং অন্যকে ভালো রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url