বয়স অনুযায়ী শিশুর খাদ্যের তালিকা সম্পর্কে জানুন

ছয় মাস থেকে ৮মাস বাচ্চা যদি মায়ের বুকের দুধ পেয়ে না থাকে তাহলে একমাত্র খাবার যা একটি নবজাতকের সকল পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। যদি শিশুরা নরম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি শক্ত খাবারগুলো খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। আমরা জানবো বয়স অনুযায়ী শিশুর খাদ্যের তালিকা।


চলুন দেরি না করে শুরু করি, একটি শিশু বেড়ে ওঠার সাথে সাথে পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য সুষম খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সব শিশুদের জন্য খাবারের তালিকা এক নয়। বয়স অনুযায়ী খাবারের তালিকা হওয়া উচিত। শিশুদের দৈহিক পুষ্টির জন্য শিশুর সঠিক খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে।

বয়স অনুযায়ী শিশুর খাদ্যের তালিকা 

একটি শিশুর বয়স যখন ছয় মাসের কাছাকাছি আসে তখন মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি বাড়তি খাবার খাওয়ানো শুরু করতে হবে। কিন্তু কোন বয়সে শিশুকে কেমন খাবার দিবেন এই বিষয়ে অনেকেই জানেন না। চলন আজকে জেনে নেই এ বিষয়ে বিস্তারিত।অনেকে মনে করেন শিশুকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ালে তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশ দ্রুত হয়।

 কিন্তু সঠিক নিয়মে সে খাবারগুলো খাওয়ান না। সেক্ষেত্রে অনেক সমস্যা হতে পারে এবং বিভিন্ন উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তাছাড়া একেক বয়সী বাচ্চাদের খাবারের তালিকা এক এক রকম। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি এবং বুদ্ধি বিকাশের জন্য একেক পরিমাপে খাবার দেওয়া প্রয়োজন। শিশুদের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো শুরু করতে হবে।

৪ মাসের শিশুর খাদ্যের তালিকা

বেশিরভাগ শিশুরা চার মাস বয়সে মায়ের বুকের দুধ খেয়ে থাকে। অনেক সময় অনেক মায়েরা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য বাড়তি খাবার দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেন। আসলে বুকের দুদি হচ্ছে শিশুদের আদর্শ খাদ্য। মায়ের বুকের দুধে একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য যা যা প্রয়োজন তা সবকিছুই থাকে।

শিশুকে কি খাওয়ানো উচিত সে সম্পর্কে যদি ভাবেন তাহলে সঠিক উত্তরটি হচ্ছে এই সময়ে বুকের দুধ এবং সহজপাচ্য কঠিন খাবারে ধীরে ধীরে যেতে হবে। যদি সহজে হজম হওয়ার মতো খাবার খাওয়ানো যায়। এ সময়ে বুকের দুধ বা ফর্মুলা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে হয়। শিশুকে বাড়তি খাবারের সাথে পরিচয় করাতে হলে ৪ থেকে ৫ বারের বেশি খাবার দেয়া উচিত হবে না।

জেনে নিন কিভাবে খাওয়াবেন

প্রথমে দানাশস্য থেকে শুরু করে সবজি খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। আপনি যদি আপনার শিশুর জন্য শক্ত খাবারের প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার বাচ্চা আসলে এরকমের খাদ্যের জন্য প্রস্তুত কিনা সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ফর্মুলা বা বুকের দুধ ৫ থেকে ৬ চা চামচের বেশি মেশানোর চেষ্টা করবেন না। তাহলে শুরুতেই খুব পাতলা হয়ে যাবে। 

সময়ের সাথে দুধ বা ফর্মুলা কম পরিমাণে মিশ্রিত করুন এবং দানাশস্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ঘন করে আপনার সন্তানের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন। প্রতিদিন এ খাদ্যের পাশাপাশি আরো অন্য রকমের খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই খাবারগুলো খাওয়ানোর অভ্যাস করবেন।

৬ মাস শিশুর খাদ্যের তালিকা

মায়ের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ৬ মাস শিশুদের বাড়তি খাবার খাওয়ানোর জন্য ডাক্তারেরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ছয় মাস বয়সী শিশুদের জন্য খাবারের তালিকা হচ্ছে গাজর, শাক, টমেটো, ডাল সামান্য তেল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো। এছাড়াও নরম করে সুজির হালুয়া ফলের রস পায়েস ডিমের নরম অংশ ও সবজি সিদ্ধ করে শিশুকে খাওয়াতে পারেন।এই সময়ে মাছ-মাংস খাওয়ার পাশাপাশি ডিম দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করতে পারেন। ডিম ও দুধে শিশুদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে।

৬ মাস বয়স হলে ফলের মধ্যে শিশুকে কলা থেকে শুরু করতে পারেন। প্রতিদিন একটা অথবা তার অর্ধেক করে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। পরে বেদানা, আঙ্গুর, আপেল ইত্যাদি জাতীয় ফলের রস করে খাওয়াতে পারেন। পাকা ফলের রসের পাশাপাশি অন্যান্য ফলগুলো সেদ্ধ করে খাওয়ালে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।

কিভাবে তৈরি করবেন ৬ মাস শিশুর খাবার

প্রথমেই এক কাপ ভাতের চাল এবং টুকরা করে কয়েক পিস আলু নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ করা হয়ে গেলে ভালোভাবে ম্যাস করে নিবেন। এই খাবারটা বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার। ভারী খাবার দিনে ২ থেকে ৩ বার দিতে পারেন। প্রথমে ২/৩ চামচ একদম পিষে দয়ের এর মত করে খাওয়াতে হবে। 

তারপর ধীরে ধীরে বাড়িয়ে প্রতিবেলায় ৬৫/৭০ মিলি করে তিন বেলা খাওয়াতে পারবেন।শিশুর শক্তি যোগাতে, শিশুদের দেহ ও মেধা বিকাশে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। ৬ মাস বয়স থেকেই দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি বাড়তি খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।

৮ মাস শিশুর খাদ্যের তালিকা

৮ মাস বয়সে অনেক শিশু বিভিন্ন খাদ্য খুব সহজে খেতে পারে। ৮ মাস বয়সী শিশুকে সকালের খাবার কিভাবে খাওয়াবেন। ৮ মাস বয়সী বাচ্চাকে সেরেলাক খাওয়াতে পারেন। ৮ মাস বয়সী বাচ্চাকে সুজি সাবু এবং কাঠবাদামের গুরা খাওয়াতে পারেন। সকাল বেলা মায়ের বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা অনুযায়ী দুধ খাওয়াতে পারেন। এবং সকাল ৯টায় সুজি বাড়তি ফল এবং তার সাথে সেরেলাক খাওয়ানোর অভ্যাস করতে পারেন। 

দুপুর বেলা খিচুড়ি, মাছ, ভাত, সবজি ইত্যাদি খাবার খাওয়ান। এবং বিকেল বেলা সুজি, সাবু, ডিমের কুসুম এবং তার পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়া যেতে পারে। রাতের বেলা ভাত সবজি মাংস ইত্যাদি খাবার খাওয়াতে পারেন। ৮ মাস বয়সী বাচ্চা এ সকল খাবার খুব সহজেই খেতে পারে। আপনারা চাইলে বিভিন্ন ফল খাওয়াতে পারেন। এগুলো খাদ্য খাওয়ালে আপনার বাচ্চা শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটবে।

শেষ কথা

বয়স অনুযায়ী সকল বাচ্চাদের সব ধরনের খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়াতে হবে। ফলমূল শাকসবজি ভাত মাছ মাংস ইত্যাদি খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। এগুলো খাওয়া শিখলে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে এবং শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি পায়। কাঠ বাদামের পেস্ট করে খাওয়ালে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন সুন্দর হয়।

আপনারা যদি আজকে লেখা আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে বিভিন্ন উপকার পেয়ে থাকবেন। কিভাবে বাচ্চাদের সঠিক নিয়মে খাওয়ানো উচিত সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আমার আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url