বয়স্ক মানুষের খাদ্যের তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন

অনেক সময় বয়স্ক মানুষরা চিন্তায় পড়ে যায় যে এ বয়সে তাদের কি কি খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এবং কি কি খাবার খেলে তারা সুস্থ থাকতে পারবে। এ বয়সে সুস্থ থাকতে হলে সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী।


আজ আমরা জানবো বয়স্ক মানুষের খাবারের তালিকা কেমন হবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন দেরি না করে শুরু করি।

ভূমিকা

বয়স্ক মানুষের একপর্যায়ে কম ক্যালরি যুক্ত এবং আরো পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। বয়সের সাথে সাথে অনেক সময় অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। এই অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য ও স্বাস্থ্যকর খাবার। নিয়মিত সুষম খাদ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য খেলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে। 
 বয়স হতে হতে মানুষের চলাফেরা পরিশ্রম কমে যায় সে ক্ষেত্রে পানির চাহিদা বা ক্ষুদা কমতে থাকে। সেজন্য প্রয়োজন কম ক্যালরিযুক্ত খাবার। বয়স্ক মানুষের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় থাকবে ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে।

বয়স্ক মানুষের খাদ্যের তালিকা

একজন মানুষ তার বয়স যদি ৬০ বছর পেরিয়ে যায় তাহলে তাকে বয়স্ক মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। বয়স্ক মানুষের সব ধরনের খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদেরকে এ সময় তাদের নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। বয়স্ক মানুষেরা এই সময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি ডিজিস, হাড়ের সমস্যা এবং দাঁতের সমস্যা হয়ে থাকে। 

সুস্থ থাকার জন্য এ বয়সে প্রয়োজন অনেক পুষ্টি।দাঁতের সমস্যা থাকায় অনেক সময় বয়স্ক মানুষেরা শক্ত খাবার চিবিয়ে খেতে পারে না সে ক্ষেত্রে নরম খাদ্য খাওয়া খুবই প্রয়োজন। তাদের খাদ্য তালিকায় থাকবে চিড়া, নরম ভাত এবং নরম বানানোর রুটি, এগুলো কার্বোহাইড্রেট সম্পূর্ণ খাদ্য।

  • পানিঃ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির পরিমাণ হ্রাস পায়। এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এ সময় পানি শূন্যতা দূর করতে ডাবের পানি, ফলের রস ইত্যাদি খেতে হবে।
  • আয়রনঃ রক্তস্বল্পতা দূর করতে আয়রন যুক্ত খাদ্য খাওয়া খুবই জরুরী। এজন্য খেতে হবে ডালিম, বাদাম, সবুজ শাকসবজি, ডিম ইত্যাদি।
  • পটাশিয়ামঃ কিডনিতে পাথর হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পটাশিয়ামের উৎস হিসেবে খেতে হবে ডাল, বাদাম, টমেটো, খেজুর, আলু, বাঁধাকপি, গাজর, মটর ইত্যাদি।

পুষ্টিকর খাদ্য গুলো হলো

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে আখরোট, মাছ,মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে চলুন জেনে নেই এই খাবার গুলোর সম্পর্কে।

  • আখরোটঃ এমন একটি খাবার যা খেলে ডায়াবেটিস এবং হার্ট নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফ্যাটি অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
  • মাছঃ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের মধ্যে চিতল বা ফ্ল্যাট ফিস অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার।
  • মিষ্টি কুমড়াঃ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মিষ্টি কুমড়া খাওয়া অত্যন্ত জরুরি কারণ এটি প্রচুর পুষ্টিকর খাদ্য। মিষ্টি কুমড়া সিদ্ধ অথবা রান্না করে খেলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
  • পালং শাকঃ পালং শাক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। পালং শাক পুষ্টিকর খাদ্য।
  • টমেটোঃ টমেটো অথবা কাঁচা দুই অবস্থায় খেলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। দুইটাই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য।

আঁশযুক্ত খাদ্য গুলো হলো

একজন বয়স্ক মানুষের পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার পাশাপাশি আঁশযুক্ত খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। বয়স্ক মানুষের কোষ্ঠকাঠিন্য স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে থাকে। এই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে প্রয়োজন আঁশযুক্ত খাদ্য। ডায়াবেটিস, কোলন ক্যান্সার, অ্যাপেন্ডিসাইড, দেহের অতিরিক্ত চর্বি নিষ্কাশনে আশ যুক্ত খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। 
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ৪০ গ্রাম আশ যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। আশ যুক্ত খাদ্যগুলো হলোঃ পেয়ারা, লিচু, পাট শাক, বরবটি, চিনাবাদাম, সিদ্ধ ছোলা, এলাচ,তেজপাতা, কালোজাম, লাল আটার রুটি ইত্যাদি।

প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গুলো হলো

বয়স বৃদ্ধির পাশাপাশি বয়স্ক মানুষের হার এবং পেশীর ক্ষমতা শক্তি ক্ষয় হতে শুরু করে। প্রোটিন খেলে শরীরে থাকা অতিরিক্ত চর্বি বের হয়ে যায়। প্রয়োজন যুক্ত খাবার খেলে মস্তিষ্ক ভালো থাকে। প্রোটিনযুক্ত খাদ্যগুলো হচ্ছে ডিম, দুধ, ডাল, মটরশুঁটি, মাশরুম, মাছ,মাংস ইত্যাদি। এই খাবারগুলো প্রতিনিয়ত খেতে হবে তাহলে দুর্বলতা এবং স্বাস্থ্যহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্যগুলো হলো

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের হাড়ের ক্ষমতা হ্রাস পায়। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের মধ্যে দুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। এটা প্রতিনিয়ত খেলে হাড় মজবুত হয়। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্যগুলো হলোঃ দুধ, দই, ডিমের কুসুম, কচুশাক,মাশরুম,পনির ইত্যাদি।

বয়স্ক মানুষের কিছু করণীয়

  • বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমে যেতে পারে এবং পুষ্টিহীনতা দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া গুলো বেশি করে খেতে হবে।
  • প্রায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা পর পর খাবার, ফলমূল ইত্যাদি খেতে হবে।
  • প্রাপ্ত বয়সে অতিরিক্ত চিনি, লবণ, কফি,চা, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে।
  • প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট হাঁটতে হবে এবং ওজন ঠিক রাখতে হবে।
  • বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে বয়স্ক মানুষেরা একাকীত্ব বোধ করে সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে বাইরে বেড়াতে যাওয়া প্রয়োজন।

লেখকের মন্তব্য

একজন বয়স্ক মানুষের প্রায় সব দিকেই খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরী। বাস বাড়ার সাথে সাথে খাদ্য বিপাক ক্ষমতা কমে যায় সেক্ষেত্রে কম কালারের যুক্ত খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। একজন বয়স্ক মানুষের পুষ্টিকর খাদ্য প্রোটিন যুক্ত খাদ্য, ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য, আঁশ যুক্ত খাদ্য খাওয়া খুবই প্রয়োজন।

আজকের লেখা আর্টিকেলটি যদি আপনি ভালোভাবে পড়ে থাকেন তাহলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জেনে উপকৃত হবেন। আমার লেখা আজকের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url