অশ্বগন্ধার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

অশ্বগন্ধা বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে পরিচিত। অশ্বগন্ধা জরিবুটি র মধ্যে একটি অন্যতম উপাদান এই গাছটি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে অশ্বগন্ধা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন সময়ে মানব শরীরের উপকারিতা প্রমাণ দিতে ক্লিনিক্যাল মেডিকেলেও এর উপকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।


আজকে আমি এ লেখার মধ্যে অশ্বগন্ধার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। কিভাবে এটি বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি দেয় এবং কতটুকু খেলে কি উপকার পাওয়া যাবে তা সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

ভূমিকা

অশ্বগন্ধা ভারত পাকিস্তান পেন আফ্রিকা মধ্যপ্রাচীর এ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ গাছের পাতা ফল ডাল সব কিছুই আয়ুর্বেদিক ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়। অশ্বগন্ধা কি সে সম্পর্কে জানাটা আমাদের জরুরী। অশ্বগন্ধা মূলত ভেজস উদ্ভিদ। ভারতীয় বিভিন্ন চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অপরিহার্য। ভারতে অশ্বগন্ধাকে অনেকেই অত্যাশ্চয ভেজস উদ্ভিদ নামে চিনে।

অশ্বগন্ধা নামটি হয়েছে ঘোড়া থেকে। মানসিক চাপ কমাতে অশ্বগন্ধা খুবই উপকারী। মানসিক চাপ কমাতে এর ব্যবহার রয়েছে। অশ্বগন্ধা শেকর থেকে ঘোড়ার মুত্রের একটি গন্ধ আসে সেজন্যেই এই কাজটাকে অশ্বগন্ধা নামে খুবই পরিচিত।

অশ্বগন্ধার উপকারিতা

অশ্বগন্ধার মধ্যে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল। ফইটোকেমিক্যালের সঠিক পরিমাণ ব্যবহারে ক্যান্সারের থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অশ্বগন্ধার মধ্যে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল, উইথানন, উইথাফেরিন এ, ডি, ই, উইথানেলাইড, ট্যানিনস ইত্যাদি উপাদান।

ঘুমের সমস্যা সমাধান করে

অশ্বগন্ধায় অ্যানজাইলকটিক উপাদান থাকে যা ঘুমের সমস্যা দূর করে। মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে। অশ্বগন্ধা মস্তিষ্ক শীতল রাখতে সাহায্য করে যার ফলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

থাইরয়েড সমস্যা সমাধান করে

অশ্বগন্ধা নিয়মিত খেলে থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। থাইরয়েড এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাদের শরীরে থাইরয়েডের হরমোন পরিমাণ কম থাকে তাদের জন্য বিশেষ উপকারী।

হাইট বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে

অনেক সময় অনেক ছেলে অথবা মেয়েরা হাইট কম থাকে। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে যদি গরম দুধের সাথে অশগন্ধা পাউডার মিশিয়ে নিয়মিত খায় তাহলে হাইট বাড়তে সাহায্য করে। তিন মাসের মধ্যে হাইট ১ থেকে ২ ইঞ্চি বৃদ্ধি পায়।

রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে

অশ্বগন্ধা মানবিক দেহের রক্তচলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেজন্য হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কম থাকে। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা উপশম হয় যদি ঠিকমতো রক্ত চলাচল করে। এছাড়াও কোলেস্টেরলাল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।

ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী

অশ্বগন্ধা নিয়মিত খেলে ত্বকের ভিতরের বলিরেখা এবং বয়সের ছাপ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা যৌবন ধরে রাখে। চুল পড়া রোধ করতে এবং চুলের গোড়া মজবুত করতে নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবন করলে চুল পড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে

কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে অশগন্ধার মধ্যে কিছু উপাদান আছে যেগুলো খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অসভ্যতা খেলে কোলন ক্যান্সার ওভারিয়ান ক্যান্সার বেস্ট ক্যান্সার এবং ব্রেন ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কমায়।

মাসিকের সমস্যা সমাধান করে

অধিকাংশ মেয়েদের মাসিকের সময় পেট ব্যথা দেখা দেয়। প্রতিনিয়ত পিরিয়ড চলাকালীন তীব্র পেট ব্যথায় ভুগে। যদি নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে অশ্বগন্ধা সেবন করা হয় তাহলে এই তীব্র পেট ব্যথা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়।

অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম

অশ্বগন্ধার শেকড় এবং গুঁড়া দুইটাই খাওয়া যায়। কিন্তু সবচেয়ে অশ্বগন্ধার গু রাখার প্রচলনটা বেশি। অশ্বগন্ধার ভালো উপকারিতা পেতে প্রতিদিন ১ চামচ করে খেতে পারেন। এটা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় গরম দুধের সাথে গরম পানির সাথে অথবা মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • প্রতিদিন সকালে ১ চামচ করে আবার রাতে ঘুমানোর আগে ১ চামচ করে খেতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অশ্বগন্ধা খাওয়া উচিত।
  • অশ্বগন্ধার গুরা ক্ষতস্থানে লাগালে মলমের মতো কাজ করে।
  • মধুর সাথে অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খেলে যৌন স্বাস্থ্যর উপকার পাওয়া যায়।
  • মধু বা বাদামের সাথে অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খেলে ঘুমের সমস্যা দূর হয় এবং দুশ্চিন্তা কমে।
  • অশ্বগন্ধা গরম পানির সাথে চায়ের মত করে খাওয়া যায়।

অশ্বগন্ধ খাওয়ার অপকারিতা

অশ্বগন্ধা প্রাকৃতিক উপাদান। এটি অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সব ঔষধের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন অপকারিতা ও রয়েছে পরিমাণের বেশি কোন কিছু খাওয়ায় উচিত না। কোন কোন বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরী।
  • অশ্বগন্ধা শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে এ সময় শর্করা কমানোর ঔষধ খাওয়া যাবেনা। রক্তে শর্করার মাত্রা অধিক পরিমাণে বেড়ে গেলে সমস্যা হতে পারে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের অশ্বগন্ধা না খাওয়াই ভালো কারণ সে সময় গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  •  যেসব মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান সেক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা না খাওয়াই ভালো।
  • অশ্বগন্ধা অনিদ্রার সমস্যার সমাধান করে সেজন্য এক্সট্রা করে ঘুমের ওষুধ না খাওয়া উচিত।
  • অনেকদিন ধরে অশ্বগন্ধা সেবন করলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন ডায়রিয়া, বমি, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি তাই কিছুদিন পর পর গ্যাপ দিয়ে খাওয়া শুরু করতে হবে।

অশ্বগন্ধা কিভাবে কাজ করে

  • সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
  • চোখের ব্যাথা দূর করতে বিশেষ উপকারী অশ্বগন্ধা।
  • শুক্রাণু বাড়াতে সাহায্য করে। এবং যৌন সমস্যা দূর করতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়।
  • চুলকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
  • খুশকি দূর করতে অনেক সময় অশ্বগন্ধার গুঁড়ো দিয়ে শ্যাম্পু তৈরি করলে খুশকি দূর হয়।
  • শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে প্রতিনিয়ত অশ্বগন্ধার গুঁড়ো খেলে ওজন বৃদ্ধি করে।
  • ইনফেকশন থেকে বাঁচাতে অশ্বগন্ধার পাতা বেশ উপকারী।
  • অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার মধ্যে অ্যান্টি ডায়াবেটিকসের উপাদান থাকে যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
  • অনেক সময় হাতের গিরা পা ফোলা প্রচন্ড ব্যথা করে প্রতিনিয়ত অশ্বগন্ধা সেবন করলে আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

শেষ কথা

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে অশ্বগন্ধার বেশ অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে। বিভিন্ন রোগ থেকে প্রতিনিয়ত অশ্বগন্ধা সেবন করলে মুক্তি পাওয়া যায়। আপনারা যদি আজকে আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে অশ্বগন্ধার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানবেন এবং উপকৃত হবেন।

যদি আমার আর্টিকেলটি ভালো লাগে তাহলে আপনার কাছের আত্মীয় স্বজনের কাছে শেয়ার করতে পারেন। এতক্ষণ আমার আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url