ডাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আজ আমরা বিভিন্ন ডাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। অনেকেই ডাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। ডাল পুষ্টি গুণ সম্পূর্ণ খাবার। ডাল বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এক এক ডালের স্বাদ, গুনাগুন, কার্যকারিতা এক এক রকম। মসুর, মুগ, কলাই, ছোলা ইত্যাদি ডালের কার্যকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
চলুন দেরি না করে বিভিন্ন ডালের কার্যকারিতা কি কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। ডাল খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। যদি আপনি ডালের বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে জেনে না থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
নিত্যদিনের খাবারে ডাল খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। বিভিন্নভাবে এ ডালগুলো খাওয়া হয়। কখনো বড়া বানিয়ে কখনো ডাল রান্না করে আবার কখনো বেসন তৈরি করে রান্না করা যায়। ডাল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যেকোনো শুকনো তরকারির সাথে ডাল মিশিয়ে খেতে অনেকেই পছন্দ করে। যে কোন তরকারির সাথে খাবারের পরিবেশনটা সুন্দর করতে সাহায্য করে। অন্যান্য তরকারির তুলনায় ডালের দাম অনেকটা সস্তা। আমরা নিয়মিত ডাল খেয়ে থাকি কিন্ত ডাল সম্পর্কে খুব একটা ভালোভাবে জানি না আজকে আমরা জানব কোন ডাল কতটা উপকারী।
মসুর ডালের উপকারিতা গুলো কি কি
মসুর ডালের উপকারিতা অনেক যা গরিবের আমিষ বলা হয়ে থাকে। মাংসের সাথে মসুরের ডালকে তুলনা করা হয়ে থাকে। মসুরের ডাল দুই রকমের হয়ে থাকে একটু একটু ছোট এবং অন্যটি বড়। চৈত্র মাসে মসুরের ডাল জমি থেকে তোলা হয়। এটি ভারতের প্রায় সর্বত্রই চাষ করা হয়। আমাদের বাংলাদেশেও এর চাষ অনেকে করে থাকে। মসুরের ডালে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে এবং এর দামও নাগালের মধ্যে। মসুর ডালের বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- মূত্রনালী পরিষ্কার করতে
- দাহ রোগ সাড়াতে
- মাথাব্যথা দূর করতে
- পেটের ব্যাথা দূর করতে
- চোখ উঠা দূর করতে
মূত্রনালী পরিষ্কার করতেঃ অনেক সময় বায়ু নিঃসরণ হয় না। সেক্ষেত্রে মূত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খোসাসহ মসুর ডাল এক লিটার পানিতে সিদ্ধ করে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে নিয়ে রাখতে হবে। সিদ্ধ করা মসুর ডাল হালকা থেঁতো করে এক ঘন্টা পর পর ৩/৪ বার খাওয়াতে হবে তাহলে খুব সহজেই সমস্যা দূর হবে।
দাহ রোগ সারাতে সাড়াতেঃ ১ লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম মুসুরের ডাল সিদ্ধ করেছে কে কিছুক্ষণ পর খাবারের সাথে খাওয়ার অভ্যাস করলে দাহ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের মাংস বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
মাথাব্যথা দূর করতেঃ অনেকের মাথা ব্যথার সমস্যা থাকে। মাথার যন্ত্রণায় ছটফট করে সে ক্ষেত্রে গোটা মসুরের ডাল সিদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে সে পানিটুক খেয়ে নিতে হবে। তাহলেই মাথাব্যথা বা মাথা ধরা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
পেট ব্যথা দূর করতেঃ অনেক সময় মুখের রুচিতে অনেক খাবার বেশি পরিমাণে খেয়ে নিই। সেক্ষেত্রে পেট ব্যথা করে। মসুরের ডাল পানির সাথে সিদ্ধ করে এক ঘন্টা পর পর ২/১ বার খেলেই পেট ব্যথা দ্রুত দূর করে।
চোখ ওঠা দূর করতেঃ গরমকালে অনেকেরই চোখ ওঠে। চোখ ওঠা দূর করতে মসুরের ডাল বেটে চোখের পাতায় লাগিয়ে রাখলে চোখ ওঠা দূর করতে সাহায্য করে।
মুগ ডালের উপকারিতা গুলো কি কি
মুগ ডাল একটি পরিচিত খাবার। প্রায় সবাই মুগ ডাল খেতে পছন্দ করে। ভারতের গুজরাটে মুগডালের বিশাল প্রচারিত রয়েছে। মুগ ডাল খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মাছের মাথা অথবা কলিজার সঙ্গে রান্না করে খেতে ভীষণ ভালো লাগে।
- আয়ুর্বেদের মতে ভাজা মুগ ডাল কাঁচা মুগ ডালে যেমন গুণ রয়েছে তেমন ভাজা ডালে ঠিক একই গুণ রয়েছে।
- ভাজা মুগ ডাল বায়ু নিঃসরণ করতে সাহায্য করে।
- ভাজা মুগডালের সাথে মধু চিনি মুড়ি একসাথে মিশিয়ে খেতে পারলে দ্রুত জ্বালাপোড়া কম হয়।
- পুরানো জ্বর অথবা পেটের অসুখ সারাতে মুগ বেশ উপকারী।
- অসুস্থ ব্যক্তিদের মুগের ডাল খাওয়া খুবই উপকারী।
কলাইয়ের ডালের উপকারিতা গুলো কি কি
যারা অতিরিক্ত কাজ করে তাদের দেহ সুস্থ রাখতে কলাইয়ের ডাল খুবই উপকারী। কলাইয়ের ডাল অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। কলাইয়ের ডালের কার্যকারিতা এবং সুস্থ থাকতে কলাইয়ের ডালের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- পেটে জমে থাকা মল বের করতে সাহায্য করে।
- হজম শক্তির বৃদ্ধি করে।
- খিদে বাড়াতে ও রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
- গ্যাসের সমস্যা ভালো করতে কলাইয়ের ডালের সাথে আদা গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত গ্যাস ভালো হয়।
- কলাইয়ের ডালের সাথে কুমড়া বড়ি দেওয়া হয়।
- মায়েদের স্তনে দুধ বৃদ্ধি করতে কলাইয়ের ডাল বেশ উপকারী। যাদের বাত ব্যথা রয়েছে
ছোলার ডালের উপকারিতা গুলো কি কি
ছোলার ডাল দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি কালো রঙ্গের দেশী ছোলা এবং অন্যটি বড় বড় কাবুলি ছোলা। ছোলার শাকে ভিটামিন বি ও সি থাকে। এই শাককে বুটের শাক বলা হয়ে থাকে। পানিতে ভিজিয়ে রাখা ছোলায় ভিটামিন বি থাকে। ভাজা ছোলা শরীরের বল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধের সাথে ছোলা ভাজা খেলে কফ বের করতে সাহায্য করে।
- রক্তস্রাব বন্ধ করতে গরম গরম ছোলা ভাজা বেশি উপকারী।
- ছোলার বেসন পানিতে গুলিয়ে মাথায় দিলে মাথার খুশকি দূর হয়।
- সর্দি কাশি দূর করতে নিয়মিত গরম ছোলা শুকতে পারেন।
- মুখে বেসন মালিশ করলে মুখে জমে থাকা কালো দাগ দূর করে এবং ত্বকে করে তোলে নরম ও সৌন্দর্য।
- কণ্ঠস্বর সুন্দর করতে ছোলার সাথে গুড় মিশিয়ে খেলে কণ্ঠস্বর সুন্দর হয়।
ডাল খাওয়ার অপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক
ডাল খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন অপকারিতা ও রয়েছে। অতিরিক্ত ডাল খেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। অতিরিক্ত ডাল খেলে শরীর মোটা এবং দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যাদের বাত ব্যথা রয়েছে তাদেআর কলাইয়ের ডাল না খাওয়াই ভালো। যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের ডাল খাওয়া উচিত না। ছোলার ডাল বেশি পরিমাণে খেলে পাথরি বৃদ্ধি করে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে বেশি পরিমাণে কোন ডাল খাওয়া না হয়।
শেষ কথা ও লেখকের মন্তব্য
আমরা নিশ্চয়ই উপরের আলোচনায় জানতে পেরেছি যে কোন ডাল খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় এবং স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। গরিব মানুষের মসুর ডাল আমিষ বলা হয়ে থাকে। নিয়মিত ডাল খাওয়ার অভ্যাস করলে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যেকোনো খাবার অপকারিতা থেকে উপকারিতা অনেক বেশি। আমাদের খেয়াল করতে হবে যাতে অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়ানো হয়ে যায়।
যদি আমার আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে শেয়ার করতে পারেন। আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url